খেলোয়াড় যখন অ্যাম্বুলেন্স চালক

                     

               খেলোয়াড় যখন অ্যাম্বুলেন্স চালক 
নভেল করোনাভাইরাসে রীতিমতো বিপর্যস্ত বর্তমান বিশ্ব।
এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসছেন বড় বড় তারকারা।
অনেকেই নানা আর্থিক সাহায্য দিয়ে পাশে থাকছেন।
কেউবা কাজ করছেন সেচ্ছাসেবী হিসেবে। 
তেমনি ইতালির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্যাার্থে দিনে ১৩ ঘন্টা অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছেন জেব্রে রাগবি ক্লাবের ফ্ল্যাকার ম্যাক্সিম এমবান্দা। 
করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারা বিশ্বের প্রায় সব ধরনের খেলা স্থগিত হয়ে গেছে। 
স্থগিত হয়েছে ইতালির রাগাবিও। 
তাই এ সময়ে ঘরে বসে না থেকে সাধারণ মানুষকে সাহায্যের চিন্তা করেন এমবান্দা। 
ইতালির হাসপাতালগুলি রোগীদের ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অসুস্থদের স্বাস্থ্যসেবা আরও শক্তিশালী  করতে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর সিদ্ধান্ত নেন এ রাগবি খেলোয়াড়। 
বার্তা সংস্থা এ এফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমবান্দা বলে 'রাগবিরের খেলা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর থেকেই আমি ভাবতে থাকি চিকিৎসার দক্ষমতা  ছাড়াই কীভাবে সাহায্য করতে পারি। 
এরপর আমি ৮দিন আগে অ্যাম্বুলেন্স চালানো শুরু করি এবং কোন বিরতি ছাড়া দিনে ১২-১৩ ঘন্টা কাজ করছি। 
সংক্রামক রোগীদের কক্ষে আমি যা দেখছি তাতে আমি নিজেকে বলি আমাকে কখনোই ক্লান্ত হওয়া চলবে না। 
প্রতিদিনই ইতালিতে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে। 
তাতে একটুও কি ভয় পান না এমবান্দা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। 
তবে কিছু ছোট জিনিস রয়েছে যা দিয়ে নিরাপদেে করা যায়। 
এবং সামনের সারীতে যারা থাকছে তাদের মাঝে মধ্যে
এক-আধ ঘন্টা বিশ্রাম দেওয়া যায়। 
তাদের জন্য প্রতি ঘন্টা গুরুত্বপূর্ণ। 
যতক্ষন আমার শক্তি আছে, আমি চালিয়ে যাব। 
আমি এখানে আছি এবং এখানেই থাকব। 
অবশ্য এমবান্দার বাবাও একজন শল্যচিকিৎসক। 
তার পরামর্শ অনুযায়ীই  এমবান্দা তার ক্লাব জেব্রের প্রবীনদের সাহাযার্থে এ কাজে মনোযোগ দেন। 
দেশটির এ অঞ্চলেই  করোনাভাইরাস অনেক বেশী সংক্রামন হয়েছে। 
তবে শুরুতে খাদ্য ও মেডিক্যাল সামগ্রী পৌঁ দেওয়ার কাজে নেমেছিলেন এমবান্দা, 'আমি প্রথমে খাদ্য ও মেডিক্যাল সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজে যুুক্ত হই। 
কিন্তু পরে আমি ভাইরাসে আক্রান্তদের এক একটি স্থানীয় হাসপাতাল থেকে অন্য জায়গায় নেওয়ার কাজ করি। 
আমি স্ট্রেচার ধরে মাঝে মধ্যে হুইল চেয়ারের রোগীদের কোলে করে তুলি। 
আমি অক্সিজেনও ধরে রাখি। 
নিজের কাজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বললেন, 'আপনি যদি তাদের চোখের দিকে তাকালে তখন দেখবেন তারা কখনো কখনো কথাও বলতে পারে না।  
তারা আপনাকে চোখের ভাষায় কিছু বোঝানোর চেষ্টা করবে যা আপনি ভাবতেও পারবেন না।
প্রথম যে ব্যাক্তিকে আমি এনেছিলাম তিনি বলেছিলেন, তার পাশের বেডের রোগী মারা যাওয়ার পর তিন ঘন্টা সে পাশের বেডে ছিল। 
সে সময় আরও দুই জন মহিলা মারা যায়। 
এর আগে সে কখনোই কাউকে মরতে দেখেনি।'
'আমি যা দেখেছি তা যদি সবাই দেখত তাহলে কেউ সুপারমার্কেটের সামনে সামান্য সময় ব্যয় করতো না। 
তারা ঘর থেকে বের হওয়ার আগে এক বার,  দুইবার, তিনবার ভাবত। 
আমি সব বয়সী রোগীদের শ্বাসকষ্ট দেখিছি। 
অক্সিজেনের মধ্যে থাকতে দেখেছি। 
দেখেছি কীভাবে ডাক্তার-নার্সরা কোন ঘুম ছাড়া দিনে টানা ২০ থেকে ২২ ঘন্টা কাজ করছেন। 
পরেরদিন কিছু বিশ্রাম দেওয়ার কথা ভাবেন।'
করোনাভাইরাস সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে ইতালিতে। 
সাধারণ তো বটেই ইতালিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত সর্বাধিক ছয় হাজার ৭৭ জনে দাঁড়িয়েছে। 
আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯২৭ জনে পৌঁছেছে। 
উদ্বেগজনক অবস্থায় পুরো ইতালি অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।                  
                                                                                                                                                                                 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ